ধুমকেতু কি? ৭৬ বছর পর পর হয় কেন?
ধুমকেতু কি?
পানি ,মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস কোন নিরেট ক্ষুদ্র শিলা খন্ডের ওপর জমে তৈরি হয় ধূমকেতু। সূর্যের চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে ঘোরার সময় এর সামনের দিকে পানি বাষ্পে পরিণত হয় এবং বিকিরণ চাপের সামনের দিকে একটু স্ফীত মাথা ও পেছনের দিকে সরু লেজের মত হয়। দেখতে অনেকটা ঝাড়ুর মতো দেখায় ।৭৬ বছর পর পর এদের একবার দেখা যায়। হ্যালির ধুমকেতু এমন একটি ধুমকেতু।
ধুমকেতু দেখতে কেমন?
ধূমকেতুর আকৃতি সাধারণত গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি হয়। ধূমকেতুর লেজ সাধারণত সূর্যের দিকে নির্দেশিত থাকে। ধূমকেতুর রঙ সাধারণত সাদা, ধূসর বা সবুজ হতে পারে। ধূমকেতুর কমার রঙ সাধারণত সাদা, ধূসর বা সবুজ হয়। ধূমকেতুর লেজের রঙ সাধারণত সাদা বা ধূসর হয়।
ছবি :সংগৃহীত ধুমকেতুর প্রকারভেদ |
ধুমকেতু মূলত দুই প্রকার যথা: স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন
স্বল্পকালীন ধূমকেতু
স্বল্পকালীন ধূমকেতু হল যেসব ধূমকেতুর কক্ষপথের পর্যায়কাল ২০০ বছরের কম। এই ধূমকেতুগুলির কক্ষপথ সাধারণত উপবৃত্তাকার হয়। স্বল্পকালীন ধূমকেতুগুলির উৎপত্তি কাইপার বেল্ট থেকে হয়। কাইপার বেল্ট হল সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত একটি বৃহৎ কক্ষপথীয় কক্ষপথ।
দীর্ঘকালীন ধূমকেতু
দীর্ঘকালীন ধূমকেতু হল যেসব ধূমকেতুর কক্ষপথের পর্যায়কাল ২০০ বছরের বেশি। এই ধূমকেতুগুলির কক্ষপথ সাধারণত অধিবৃত্তাকার বা পরাবৃত্ত হয়। দীর্ঘকালীন ধূমকেতুগুলির উৎপত্তি ওর্ট মেঘ থেকে হয়। ওর্ট মেঘ হল সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত একটি বৃহৎ গোলাকার কক্ষপথীয় কক্ষপথ।
ধূমকেতুর জীবনচক্র
ধূমকেতুর জীবনচক্রকে সাধারণত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়:
ওরবিটাল পর্যায়
এই পর্যায়ে ধূমকেতু একটি দূরবর্তী কক্ষপথে থাকে। এই কক্ষপথটি সাধারণত খুবই দীর্ঘ হয় এবং কয়েক মিলিয়ন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
অ্যাপোহেলিয়ন পর্যায়
এই পর্যায়ে ধূমকেতু কক্ষপথের সবচেয়ে দূরবর্তী বিন্দুতে থাকে। এই পর্যায়ে ধূমকেতুর অবস্থান সূর্য থেকে এতটাই দূরে থাকে যে এটি খুবই ক্ষীণ দেখায়।
পেরিহেলিয়ন পর্যায়
এই পর্যায়ে ধূমকেতু কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের বিন্দুতে থাকে। এই পর্যায়ে ধূমকেতুর অবস্থান সূর্য থেকে এতটাই কাছে থাকে যে এটি খুবই উজ্জ্বল দেখায়। এই পর্যায়ে ধূমকেতুর কমা এবং লেজও সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়।
হ্যালির ধুমকেতু প্রতিবছর দেখা যায় না কেন?
আমরা জানি সকল যে, সকল গ্রহ নক্ষত্র সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তেমনি হ্যালির ধুমকেতুও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর কাছাকাছি ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকে । এই ধুমকেতু পৃথিবীতে আসতে সময় লাগে ৭৬ বছর ।সেজন্য ৭৬ বছর পরপর হ্যালির ধুমকেতু দেখা যায়।
হ্যালির ধূমকেতু সূর্যকে প্রদক্ষিণ
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো হ্যালির ধূমকেতু। হ্যালিকে ক্ষণস্থায়ী ধূমকেতু বলা হয় কারণ সে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে প্রায় ২০০ বছর লাগে।
ধূমকেতুর গঠন :
কমা
কমা হল ধূমকেতুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি পাতলা, ক্ষণস্থায়ী বায়ুমন্ডল। এটি ধূলিকণা এবং গ্যাসের দ্বারা গঠিত। কমার আকার এবং উজ্জ্বলতা ধূমকেতুর নিকটতম দূরত্বের উপর নির্ভর করে।
লেজ
লেজ হল ধূমকেতুর কমার বাইরে অবস্থিত একটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম কাঠামো। এটি ধূলিকণা এবং আয়ন দ্বারা গঠিত। ধূলিকণা লেজটি ধূলিকণা দ্বারা গঠিত। আয়ন লেজটি চার্জযুক্ত কণা দ্বারা গঠিত। ধূলিকণা লেজটি সূর্যের বায়ুপ্রবাহ দ্বারা চালিত হয়। আয়ন লেজটি সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের দ্বারা চালিত হয়।
নিউক্লিয়াস
নিউক্লিয়াস হল ধূমকেতুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি কঠিন দেহ। এটি বরফ, ধূলিকণা এবং শিলা দ্বারা গঠিত। নিউক্লিয়াসের আকার সাধারণত কয়েক কিলোমিটার থেকে কয়েকশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধূমকেতুর গঠন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনও কিছু মতবিরোধ রয়েছে। তবে, সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ধূমকেতু সৌরজগতের উৎপত্তি থেকেই বিদ্যমান।
FAQ
১.ধূমকেতুর গঠন কি দিয়ে?
উঃ কমা,লেজ ও নিউক্লিয়াস ।
২.হ্যালির ধূমকেতু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে কত সময় লাগে?
উঃ প্রায় ২০০ বছর।
৩.হ্যালির ধুমকেতু প্রতিবছর দেখা যায় না কেন?
উঃ ৭৬ বছর পর পৃথিবীর কক্ষপথে আসে সেজন্য।
৪.ধূমকেতুর জীবনচক্র কয়টি?
উঃ তিনটি।
৫.ধুমকেতুর কত প্রকার?
উঃ দুই প্রকার ।